Breaking







Sunday, October 10, 2021

সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান

সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান:

সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান
 রাজা রামমোহন রায়ের অবদান 
নমস্কার বন্ধুরা,
আজ সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান আলোচনা করা হলো, যেখানে ভারতীয় সমাজের সর্বাঙ্গীন সংস্কার ও সতীদাহ প্রথার উচ্ছেদে তাঁর ভূমিকার কথা বর্ণিত আছে। ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থা যখন কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, চরম বর্ণবাদ, ধর্মের নামে দুর্নীতিপরায়ণ পুরোহিত শ্রেণীর আধিপত্য সেই সময় ১৭৭২ (মতান্তরে ১৭৭৪) সালের ২২ শে মে পশ্চিম বঙ্গের হুগলী জেলার রাধানগর গ্রামে এক রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ পরিবারে রাজা রামমোহন রায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বংশগত পদবী ছিল বন্দোপাধ্যায়। তাঁর পূর্বপুরুষগণ মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে বাংলার নবাবের অধীনে চাকরি করতেন। নবাবের কাছ থেকে তারা রায় রায়হান উপাধি লাভ করেন।

সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান 


ধর্মসংস্কারে রামমোহন রায়ের অবদান:: 

পৌত্তলিকতার ঘোর বিরোধী রামমোহন হিন্দু ধর্মের প্রচলিত কুপ্রথার বিরুদ্ধে কুঠারাঘাত হানেন। ইসলামের সুফীবাদ ও দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একেশ্বরবাদী ও নিরাকার ব্রহ্মে বিশ্বাসী হন। ১৮০৩ সালে আরবী ও ফারসী ভাষায় ‘তুহফাত উল মুহাহিদীন' বা একেশ্বর বাদীদের প্রতি ‘উপহার’ নামক গ্রন্থ প্রকাশ করেন এবং একই সময় ‘মানজারাতুল আধিয়ান’ বা ‘বিভিন্ন ধর্মের উপর আলোচনা' নামে পুস্তক প্রকাশ করেন। ১৮১৫ সালে তিনি ব্রহ্ম সম্বন্ধে আলোচনার জন্য আত্মীয় সভা গঠন করেন। সেখানে বিভিন্ন শাস্ত্র সম্পর্কে আলোচনা, বেদপাঠ ও ব্রহ্ম সংগীত অনুষ্ঠিত হতো। ১৮২৮ সালে ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে সার্বজনীন ধর্মের কথা বলা হতো।

সমাজ সংস্কার ও সতীদাহ প্রথা নিরোধ:: 

সমাজের কু-প্রথা ও কু-সংস্কারের বিরুদ্ধে মানুষের মুল্যবোধ ও দৃষ্টি ভঙ্গিতে পরিবর্তন সাধনের জন্য রাজা রামমোহন ব্যাপক জনমত গঠন করেন। ফলে বিভিন্ন ঘৃন্য ও অমানবিক কু-প্রথা যেমন শিশু কন্যা বলি দান, বহুবিবাহ এবং সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়। মুলত ধর্ম সংস্কারের মুলে তার মহৎ উদ্দেশ্য ছিল সমাজ সংস্কার। মানবতার ইতিহাসে প্রাচীন হিন্দু সমাজে সবচেয়ে অমানবিক ও নিষ্ঠুর প্রথা ছিল সতীদাহ। এ প্রথা অনুসারে স্বামীর মৃত্যুর পরে একই চিতায় স্ত্রীকে জীবন্ত পুঁড়িয়ে মারা হত। তিনি হিন্দু ধর্ম ও বিভিন্ন শাস্ত্র বিশ্লেষন করে প্রমান করেন এটি ধর্ম বিরুদ্ধ এবং তা বাতিলের জন্য জনগণকে সচেতন করে তোলার জন্য লেখনী ধারন করে সতীদাহ প্রথার অসারতা প্রমান করেন। কিন্তু কট্টর হিন্দুরা তীব্রভাবে বিরোধিতা করেন। তবে রাজা রামমোহন রায়ের আহবানে সারা দিয়ে প্রগতিশীল সমাজ বৃটিশ রাজশক্তিকে এই প্রথার অসারতা বুঝাতে সমর্থ হলে ১৮২৯ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর গভর্ণর জেনারেল উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করে সতীদাহ উচ্ছেদ আইন প্রণয়ন করেন। এই আইনে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা স্ত্রীকে আত্মাহুতির নামে জীবন্ত পুড়িয়ে মারাকে দন্ডনীয় ঘোষনা করা হয়।

শিক্ষা সংস্কারে রামমোহন রায়ের অবদান:: 

ভারত বর্ষে শিক্ষা বিস্তারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য শিক্ষা ও সভ্যতার সমন্বয়ে আধুনিক শিক্ষায় প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করতে সক্ষম হন। ইংরেজি শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে তৎকালীন বড়লাট লর্ড আমহাষ্টের নিকট একটি অনুরোধ পত্র লিখেছিলেন । তিনি নিজ ব্যয়ে ও বন্ধু-বান্ধবের সহায়তায় ১৮২২ সালে কলকাতায় 'এ্যাংলো হিন্দু স্কুল' নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এতে ইংরেজী ভাষা, আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শন শিক্ষা দেয়া হত। দেশে শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি ১৮২৬ সালে বেদান্ত কলেজ স্থাপন করেন এবং একই বছর সংস্কৃত মুক্ত স্বাধীন ব্যাকরণ রচনা করেন তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে বেদান্ত গ্রন্থ ও বেদান্ত সার। তিনি বিশ্বাস করতেন সমাজ জীবনথেকে কুসংস্কার, অন্ধতা ও মুর্তি পুঁজা বন্ধ করতে হলে শিক্ষার বিকল্প নাই।

রাজনৈতিক সংস্কারে রামমোহন রায়ের অবদান::

রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ ও জাতীয় জাগরণে রামমোহন রায় সচকিত ছিলেন। ১৮২১ সালে “সংবাদ কৌমুদী” নামক পত্রিকায় তিনি রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক চেতনায় জনগণকে উজ্জীবিত করতে প্রয়াস পান। ১৮২৩ সালে সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা খর্বকারী সংবাদপত্র বিধি পাস হলে ভারতীয়দের নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য প্রতিবাদ উত্থাপনে অনন্য ভূমিকা পালন করেন। তাছাড়া, ব্রিটিশ শাসনামলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কৃষকদের দুর্দশার কথাও পার্লামেন্টে উত্থাপন করেন। এক্ষেত্রে তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও আন্তর্জাতিক মননশীলতার প্রতিফলন ঘটে।

               পরিশেষে, ভারত বর্ষে যখন কালরাত্রির অন্ধকার বিরাজ করছিল তখন জ্বাজল্যমান রশ্মির ন্যায় রাজা রামমোহন রায়ের আবির্ভাব ঘটলেও তাকে আজীবন কুসংস্কার ও কুপমন্ডুকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। কৈশোর থেকে মহাপ্রয়ান পর্যন্ত মুক্তির মশাল জ্বালিয়ে ভারতের সমাজকে আলোকিত করে গেছেন। ১৮৩৩ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের ব্রিষ্টল নগরীতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

রামমোহন রায়ের সম্পর্কে এই তথ্যটি ভালো লাগলে বন্ধুদের শেয়ার করুন

-ধন্যবাদ-

No comments:

Post a Comment

Dont Leave Any Spam Link